২৬শে মার্চ কবিতা। স্বাধীনতা দিবসের কবিতা আবৃতি
২৬শে মার্চ কবিতা। আজ ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এটি ছিলো বাঙ্গালিদের উদ্দেশ্য তার শেষ ভাষণ। এই ভাষণের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে কে স্বাধীন ঘোষণা দেন। তার দেওয়া এই ভাষণের ফলে লাখো বাঙালি মুক্তি যুদ্ধের অনুপ্রেরণা পায়। সবাই দেশ কে শত্রু মুক্ত করতে এগিয়ে আসে। ২৬ শে মার্চ সম্পর্কে অনেক ধরনের কবিতা লেখা হয়েছে।
এই কবিতা গুলো গুগলে বা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া আছে। আপনারা অনেকে স্বাধীনতা দিবসের কবিতা পড়তে চাচ্ছেন। তাদের জন্য আমি এই পোস্টে ২৬শে মার্চ কবিতা, ২৬ শে মার্চ এর ছোটদের কবিতা, স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা শেয়ার করেছি। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা এই কবিতা গুলো আবৃতি করতে পারবেন। তো যাদের প্রয়োজন, তারা নিচে থেকে কবিতা গুলো পড়ে নিবেন। ২৬শে মার্চ কবিতা দেখুন।
২৬শে মার্চ কবিতা
আপনারা কি জানেন ২৬ শে মার্চ কি? অনেকেই জানেন না। ২৬ শে মার্চ কে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস বলা হয়। এই দিনটি বাঙ্গালিদের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন, যার উদ্দেশ্য লাখো বাঙালি দেশকে স্বাধীন করতে পেরেছে। তারা শত্রুদের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছে। এই দিন কে স্মরণীয় করে রাখতে আমাদের দেশের অনেক বিখ্যাত কবি ২৬শে মার্চ কবিতা লিখেছেন। এই কবিতা গুলো বহু বার বহু ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আপনাদের জন্য সেখান থেকে শ্রেষ্ঠ কিছু কবিতা সংগ্রহ করে দিয়েছি। এখান থেকে ২৬ শে মার্চ সম্পর্কে সেই কবিতা গুলো পড়তে পারবেন।
স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা
সালমান আহমদ
স্বাধীনতা তুমি আমার স্বাধীনতা!
তুমি জাগ্রত জনতার গৌরবগাথাঁ।
লাখো জনতার হৃদয়বিদারক
স্মৃতিকথা তুমি স্বাধীনতা ।
যেদিন বাংলা বলাতে ছিল যত বাধা
সেদিন স্বাধীনতা ।
সেই কালো রাতের অস্থির অবস্থা
সেই তুমি স্বাধীনতা।
২৫ শে মার্চের করুন স্মৃতিকথা
সেই তুমি স্বাধীনতা।
২৬ শে মার্চের ডাক দেয়া জনতা
সেই তুমি স্বাধীনতা।
শত মা বোনের মানহানির যত কথা
সেই তুমি স্বাধীনতা ।
দামাল ছেলের প্রাণের অস্থিরতা
সেই তুমি স্বাধীনতা
বাঙালির থাবায় শত্রুদের পরাধীনতা
সেই তুমি স্বাধীনতা
এক ঝাক তরুনের জেগে ওঠার কথা
সেই তুমি স্বাধীনতা।
১৬ ডিসেম্বরের ইতিকথা
সেই তুমি স্বাধীনতা।
স্বাধীনতা তুমি আমার স্বাধীনতা
তুমি জাগ্রত জনতার গৌরবগাথাঁ।
স্বাধীনতা
সাব্বির রহমান
অগ্নিঝরা স্বাধীনতার মাস
নাম ছিলো তার মার্চ,
এই মাসেতেই পাকিস্তানিরা
করেছিলো অপারেশন সার্চ।
রাঁওফরমান আর টিক্কা খাঁন
ছিলো তাদের নেতা,
ঢাকা সহ পূর্ব পাকিস্তানে
করলো নর হত্যা।
বাঙালি নিধনে সেদিন তারা
হয়েছিলো উম্মাদ,
কেউ তো শোনেনি সেদিন এই
বাঙালির আর্তনাদ।
মুজিব নামটি সবাই জানে
ছিলো বাংলার ছেলে,
২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে
ভরলো তাকে জেলে।
তার আগেই হয়েছিলো পূরণ
সুপ্ত বাসনা,
বঙ্গবন্ধু করে গিয়েছিলো
স্বাধীনতার ঘোষণা।
স্বাধীনতা তুমি
-শামসুর রাহমান
স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি
বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।
স্বাধীনতা
-জাহিদুল ইসলাম
স্বাধীনতা আমার
পিতাহীন জননীর সন্তান!
স্বাধীনতা আমার
কিশোরী বোনের ধর্ষিত মুখ!
স্বাধীনতা আমার
বিধবা মায়ের চোখের জল!
স্বাধীনতা আমার
পঙ্গু বাবার হুইল চেয়ার।
স্বাধীনতা তুমি
বিকেলের আকাশে ধবল বক,
স্বাধীনতা তুমি
নিশ্চিন্তে উড়া সোনালি-ডানা চিল।
স্বাধীনতা তুমি
কোকিলের কণ্ঠে মিষ্টি সুর,
স্বাধীনতা তুমি
ভোরের আকাশে সোনাঝড়া রোদ্দুর।
স্বাধীনতা তুমি
বিদ্রোহী কবি নজরুলের চির উন্নত-মম-শীর,
স্বাধীনতা তুমি
জাদুঘরে ঝুলে থাকা রক্তমাখা আসাদের শার্ট!
স্বাধীনতা আমার
বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তোলার অধিকার,
স্বাধীনতা আমার
কোটি বাঙালী’র জেগে উঠার উদ্যম গতি।
স্বাধীনতা তুমি
২১শে ফেব্রুয়ারি’র প্রভাত ফেরির গান,
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে ফুলের সমাহার।
স্বাধীনতা তুমি
রবি ঠাকুরের ভালবাসার সোনার বাংলা,
স্বাধীনতা তুমি
জীবনানন্দ’র ধানসিড়ির তীরে ফিরে আসার আর্তনাদ।
স্বাধীনতা তুমি
কিশোরির হাতে বর্ষাবরণ কদম ফুল,
স্বাধীনতা তুমি
গ্রীষ্মের দুপুরে জ্বলে উঠা কৃষ্ণচূড়া’র আগুন।
স্বাধীনতা আমার
সবুজ ঘাসের চাদরে রক্তমাখা পতাকা,
স্বাধীনতা আমার
কোটি বাঙালীর হৃদয় জুড়ানো ভালবাসা।
স্বাধীনতা তুমি
কাঁশফুলের শুভ্র ঝড়,
স্বাধীনতা তুমি
আমার হৃদয়ে চির অমর।
স্বাধীনতা দিবসের কবিতা
২৬ শে মার্চ কেই স্বাধীনতা দিবস বলা হয়। অনেকে স্বাধীনতা দিবসের কবিতা পড়ার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করতেছিলেন, তাদের জন্য এই অংশ টুকু। অনেক কবি তাদের ভাষায় স্বাধীনতা দিবস কে প্রকাশ করেছে। তাই এই দিবস সম্পর্কে স্মৃতিময় কবিতা লিখেছেন এবং সেই কবিতা গুলো সবার সাথে শেয়ার করেছে। তাদের লেখা স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে বিখ্যাত কিছু কবিতা নিচে শেয়ার করেছি। আশা করছি এই কবিতা পড়ার মাধ্যমে তাদের মনের ভাব বুঝতে পারবেন।
কবিতা ১ঃ
স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো
নির্মলেন্দু গুণ
একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: ‘কখন আসবে কবি?’
এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,
এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না, এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না।
তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি? তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে
ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হদৃয় মাঠখানি?
জানি, সেদিনের সব স্মৃতি ,মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত
কালো হাত৷ তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ
হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,
শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প।
সেই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর।
না পার্ক না ফুলের বাগান, -এসবের কিছুই ছিল না,
শুধু একখন্ড অখন্ড আকাশ যেরকম, সেরকম দিগন্ত প্লাবিত
ধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়।
আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
এই ধু ধু মাঠের সবুজে।
কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে
(২৬শে মার্চ কবিতা)
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,
লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,
পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক।
হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নিম্ন মধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা, ভবঘুরে
আর তোমাদের মত শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে।
একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্যে কী ব্যাকুল
প্রতীক্ষা মানুষের: “কখন আসবে কবি?’ “কখন আসবে কবি?’
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন৷
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হদৃয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি:
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।
কবিতা ২ঃ
অস্ত্র সমর্পণ
হেলাল হাফিজ
মারণাস্ত্র মনে রেখো ভালোবাসা তোমার আমার।
নয় মাস বন্ধু বলে জেনেছি তোমাকে, কেবল তোমাকে।
বিরোধী নিধন শেষে কতোদিন অকারণে
তাঁবুর ভেতরে ঢুকে দেখেছি তোমাকে বারবার কতোবার।
মনে আছে, আমার জ্বালার বুক
তোমার কঠিন বুকে লাগাতেই গর্জে উঠে তুমি
বিস্ফোরণে প্রকম্পিত করতে আকাশ, আমাদের ভালবাসা
মুহূর্তেই লুফে নিত অত্যাচারী শত্রুর নি:শ্বাস।
মনে পড়ে তোমার কঠিন নলে তন্দ্রাতুর কপালের
মধ্যভাগ রেখে, বুকে রেখে হাত
কেটে গেছে আমাদের জঙ্গলের কতো কালো রাত!
মনে আছে, মনে রেখো
আমাদের সেই সব প্রেম-ইতিহাস।
অথচ তোমাকে আজ সেই আমি কারাগারে
সমর্পণ করে, ফিরে যাচ্ছি ঘরে
মানুষকে ভালোবাসা ভালোবাসি বলে।
যদি কোনোদিন আসে আবার দুর্দিন,
যেদিন ফুরাবে প্রেম অথবা হবে না প্রেম মানুষে মানুষে
ভেঙে সেই কালো কারাগার
আবার প্রণয় হবে মারণাস্ত্র তোমার আমার।
কবিতা ৩ঃ
শহীদদের প্রতি
আসাদ চৌধুরী
তোমাদের যা বলার ছিল
বলছে কি তা বাংলাদেশ ?
শেষ কথাটি সুখের ছিল ?
ঘৃণার ছিল ?
নাকি ক্রোধের,
প্রতিশোধের,
কোনটা ছিল ?
নাকি কোনো সুখের
নাকি মনে তৃপ্তি ছিল
এই যাওয়াটাই সুখের।
তোমরা গেলে, বাতাস যেমন যায়
গভীর নদী যেমন বাঁকা
স্রোতটিকে লুকায়
যেমন পাখির ডানার ঝলক
গগনে মিলায়।
সাঁঝে যখন কোকিল ডাকে
কারনিসে কি ধুসর শাখে
বারুদেরই গন্ধস্মৃতি
ভুবন ফেলে ছেয়ে
ফুলের গন্ধ পরাজিত
স্লোগান আসে ধেয়ে।
তোমার যা বলার ছিল
বলছে কি তা বাংলাদেশ ?
কবিতা ৪ঃ
বন্দী শিবির থেকে
শামসুর রাহমান
ঈর্ষাতুর নই, তবু আমি
তোমাদের আজ বড় ঈর্ষা করি। তোমরা সুন্দর
জামা পরো, পার্কের বেঞ্চিতে বসে আলাপ জমাও,
কখনো সেজন্যে নয়। ভালো খাও দাও,
ফুর্তি করো সবান্ধব
সেজন্যেও নয়।
বন্ধুরা তোমরা যারা কবি,
স্বাধীন দেশের কবি, তাদের সৌভাগ্যে
আমি বড়ো ঈর্ষান্বিত আজ।
যখন যা খুশি
মনের মতো শব্দ কী সহজে করো ব্যবহার
তোমরা সবাই।
যখন যে শব্দ চাও, এসে গেলে সাজাও পয়ারে,
কখনো অমিত্রাক্ষরে, ক্ষিপ্র মাত্রাবৃত্তে কখনো-বা।
সেসব কবিতাবলী, যেন রাজহাঁস
দৃপ্ত ভঙ্গিমায় মানুষের
অত্যন্ত নিকটে যায়, কুড়ায় আদর।
অথচ এদেশে আমি আজ দমবদ্ধ
এ বন্দী-শিবিরে
মাথা খুঁড়ে মরলেও পারি না করতে উচ্চারণ
মনের মতন শব্দ কোনো।
মনের মতন সব কবিতা লেখার
অধিকার ওরা
করেছে হরণ।
প্রকাশ্য রাস্তায় যদি তারস্বরে চাঁদ, ফুল, পাখি
এমনকি নারী ইত্যাকার শব্দাবলী
করি উচ্চারণ, কেউ করবে না বারণ কখনো।
কিন্তু কিছু শব্দকে করেছে
বেআইনী ওরা
ভয়ানক বিস্ফোরক ভেবে।
স্বাধীনতা নামক শব্দটি
ভরাট গলায় দীপ্ত উচ্চারণ করে বারবার
তৃপ্তি পেতে চাই। শহরের আনাচে কানাচে
প্রতিটি রাস্তায়
অলিতে-গলিতে,
রঙিন সাইনবোর্ড, প্রত্যেক বাড়িতে
স্বাধীনতা নামক শব্দটি আমি লিখে দিতে চাই
বিশাল অক্ষরে।
স্বাধীনতা শব্দ এত প্রিয় যে আমার
কখনো জানিনি আগে। উঁচিয়ে বন্দুক,
স্বাধীনতা, বাংলাদেশ- এই মতো শব্দ থেকে ওরা
আমাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখছে সর্বদা।
অথচ জানেনা ওরা কেউ
গাছের পাতায়, ফুটপাতে
পাখির পালকে কিংবা নারীর দু’চোখে
পথের ধুলায়
বস্তির দুরন্ত ছেলেটার
হাতের মুঠোয়
স্বাধীনতা নিয়ে ছোট কবিতা
স্বাধীনতা দিবসের কিছু ছোট ছোট কবিতা আছে। যেগুলো এখানে শেয়ার করেছি। অনেকে বড় কবিতা পড়তে পছন্দ করে না। তাদের জন্য স্বাধীনতা নিয়ে সুন্দর সুন্দর ছোট কবিতা সংগ্রহ করেছি। যারা ছোট কবিতা পড়তে চান, তারা নিচে থেকে পড়ে নিতে পারেন। এই কবিতা গুলো ছোট শিশুদের জন্যও দেওয়া হয়েছে।
এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়
হুমায়ুন আজাদ
এ লাশ আমরা রাখবো কোথায় ?
তেমন যোগ্য সমাধি কই ?
মৃত্তিকা বলো, পর্বত বলো
অথবা সুনীল-সাগর-জল-
সব কিছু ছেঁদো, তুচ্ছ শুধুই !
তাইতো রাখি না এ লাশ আজ
মাটিতে পাহাড়ে কিম্বা সাগরে,
হৃদয়ে হৃদয়ে দিয়েছি ঠাঁই।
সংগ্রাম চলবেই
সিকান্দার আবু জাফর
রক্তচোখের আগুন মেখে ঝলসে যাওয়া আমার বছরগুলো
আজকে যখন হাতের মুঠোয় কণ্ঠনালীর খুন পিয়াসী ছুরি
কাজ কি তবে আগলে রেখে বুকের কাছে কেউটে সাপের ঝাপি
আমার হাতেই নিলাম আমার নির্ভরতার চাবি
তুমি আমার আকাশ থেকে সরাও তোমার ছায়া
তুমি বাংলা ছাড়ো
অনেক মাপের অনেক জুতোর দামে তোমার হাতে
দিয়েছি ফুল হৃদয় সুরভিত
সে ফুল খুঁজে পায়নি তোমার চিত্তরসের ছোঁয়া
পেয়েছে শুধু কঠিন জুতোর তলা
আজকে যখন তাদের স্মৃতি অসন্মানের বিষে
তিক্ত প্রানে শ্বাপদ নখের জ্বালা
কাজ কি চোখের প্রসন্নতায় লুকিয়ে রেখে প্রেতের অট্টহাসি
আমার কাঁধেই নিলাম তুলে আমার যত বোঝা
তুমি আমার বাতাস থেকে মুছো তোমার ধূলো
তুমি বাংলা ছাড়ো
একাগ্নতার স্বপ্ন বিনিময়ে মেঘ চেয়েছি
ভিজিয়ে নিতে যখন পোড়া মাটি
বারে বারেই তোমার খরা আমার খেতে বসিয়ে গেছে ঘাঁটি
আমার প্রীতি তোমার প্রতারনা
যোগ বিয়োগে মিলিয়ে
নিলে তোমার লাভের জটিল অন্কগুলো
আমার কেবল হাড় জুড়ালো হতাশ শ্বাসের ধূলো
আজকে যখন খুঁড়তে গিয়ে নিজের কবরখানা
আপন খুলির কোদাল দেখে সর্বনাশা বজ্র দিয়ে গড়া
কাজ কি দ্বিধায় বিষন্নতায় বন্দী রেখে ঘৃনার অগ্নিগিরি
আমার বুকেই ফিরিয়ে নেব ক্ষীপ্ত বাঘের থাবা
তুমি আমার জল স্থলের মাদুর থেকে নামো
তুমি বাংলা ছাড়ো
উচ্চারণগুলি শোকের
আবুল হাসান
লক্ষি বউটিকে আমি আজ আর কোথাও দেখিনা,
হাটি হাটি শিশুটিকে কোথাও দেখিনা,
কতগুলি রাজহাঁস দেখি নরম শরীর ভরা রাজহাঁস দেখি,
কতগুলি মুখস্থ মানুষ দেখি,
বউটিকে কোথাও দেখিনা শিশুটিকে কোথাও দেখিনা!
তবে কি বউটি রাজহাঁস? তবে কি শিশুটি আজ সবুজ মাঠের সূর্য, সবুজ আকাশ?
অনেক রক্ত যুদ্ধ গেলো, অনেক রক্ত গেলো, শিমুল তুলোর মতো সোনারূপো ছড়ালো বাতাস।
ছোটো ভাইটিকে আমি কোথাও দেখিনা, নরোম নোলক পরা বোনটিকে আজ আর কোথাও দেখিনা!
কেবল পতাকা দেখি, কেল উৎসব দেখি, স্বাধীনতা দেখি,
তবে কি আমার ভাই আজ ঐ স্বাধীন পাতাকা? তবে কি আমার বোন, তিমিরের বেদীতে উৎসব?
স্বাধীনতা
ইসমত জাহান লিমা
স্বাধীনতা মানে
একটি মুখের সংগ্রামী কবিতা
স্বাধীনতা মানে
নিজ ভূখন্ডে উদিত রবিটা।
স্বাধীনতা মানে
এক রক্তক্ষয়ী ইতিহাস
স্বাধীনতা মানে
মাতৃভূমিতে স্বাধীন বসবাস।
স্বাধীনতা মানে
পরাধীনতার শিকল ভাঙ্গা,
স্বাধীনতা মানে
লাল-সবুজ সদা জয়গান।
স্বাধীনতা দিবসের ছোটদের কবিতা আবৃতি
২৬ শে মার্চ বা স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে স্কুল বা কলেজে ও অন্যান্য স্থানে অনুষ্ঠান হয়। এই অনুষ্ঠানে কবিতা প্রতিযোগিতা বা কবিতা আবৃতি করা হয়। অনেক শিশু সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। তাদের জন্য এখানে স্বাধীনতা দিবসের কবিতা আবৃতি শেয়ার করেছি। কবিতা গুলো খুব সহজ। তাই ছোট ছেলে-মেয়েরা খুব সহজেই মুখস্থ করতে পারবে এবং অনুষ্ঠানে কবিতা গুলো আবৃতি করতে পারবেন। নিচে কয়েকটি কবিতা দেওয়া আছে। এখান থেকে আপনার পছন্দের কবিতা টি সংগ্রহ করে নিবেন।
স্বাধীনতা
জাহিদুল ইসলাম
স্বাধীনতা আমার
ফুটপাতে প’রে থাকা অনাহারী শিশু!
স্বাধীনতা আমার
ভাইয়ের বুকে বিদ্ধ বুলেট!
স্বাধীনতা আমার
মুক্ত বাতাসে ধর্ষিত গণতন্ত্র!
স্বাধীনতা আমার
বিবেকের দরোজা তালাবদ্ধ!
স্বাধীনতা আমার
রক্তমাখা ফসলের ক্ষেত!
স্বাধীনতা আমার
রোদেপোড়া কৃষকের ক্ষুধার্ত পেট!
স্বাধীনতা আমার
মুখোশের আড়ালে ভন্ড রাজা!
স্বাধীনতা আমার
বুরজোয়া’র ঘরে নাচে নগ্ন নর্তকী!.
স্বাধীনতা তুমি
বেশ্যার পেটে অনাকাক্সিক্ষত ভ্রুণ!
স্বাধীনতা তুমি
অর্ধউলঙ্গ রমণীর মুখে শালীনতার বয়ান!
স্বাধীনতা তুমি
কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানি’র লাশ!
স্বাধীনতা তুমি
স্বজনহারা প্রমিকার বোবা আর্তনাদ।
স্বাধীনতা আমার
দন্ডিত মানবতা!
স্বাধীনতা আমার
নতজানু জাতির পতাকা!
একটি পতাকা পেলে
হেলাল হাফিজ
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস
ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন,–’পেয়েছি, পেয়েছি’।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে
ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,
বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুতে-ভাতে।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে,
সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ
সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে।
২৬ শে মার্চের পিকচার
আমার দেশ স্বাধীনতা
কলমে-মিলি কবিরাজ
মানুষের অনুভূতি যত গুলো
সুন্দর অনুভূতি ভালোবাসা
যা কিছু করণীয় পৃথিবীতে
মাতৃভূমির জন্য মধুর সবচেয়ে
এই ভালোবাসা হয়নি যাদের অনুভব
নেইতো কিছু তারমধ্যে দুর্ভোগ ্
হয়েছিল একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ
মাতৃভূমিকে বাঁচাবার জন্য
জানবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম
স্বাধীন বাংলার ইতিহাস
গর্বে ফুলবে বুক বীরত্বআত্মত্যাগ
জাগবে ভালোবাসা দেশের জন্য
সোনালী ঊষালগ্নে নব কিশলয় নন্দিত
হিমসকালে তুষার স্নিগ্ধা কুমারী
কুড়ায় আঁচলে স্বাধীনতা অঞ্জলী ভরি
গণহত্যা ২৫ শে মার্চের রাতে
স্বাধীনতা ২৬ শে মার্চের প্রভাতে
গণযুদ্ধ নেই কোন মানবতা
গ্লানি নিঃশংস নিষ্ঠুরতা
ঝরে পরলো তাজা প্রাণ লক্ষ লক্ষ
রঞ্জিত হল বিদেশি অস্ত্র
বাঙালি বক্ষ রক্ত
লক্ষ শহীদ প্রাণ দিয়
দেখেছেন ভবিষ্যৎ স্বপ্ন
প্রিয় মাতৃভূমিতে মুক্তিযোদ্ধার হাতে
হাত রেখে নতুন প্রজন্ম
বলবে এনেছ স্বাধীনতা প্রিয় ভাই বন্ধু
তাইতো এনেছি অনেক ভালোবাসা
শুধুই তোমাদের জন্য
বলবে মধুর স্বরে
যে স্বপ্ন তোমরা দেখেছিলে
গড়ে তুলবো সেই সোনালি বাংলাদেশআঁকবো সবুজের রংগে লাল পতাকা
সবুজ-শ্যামল ধানক্ষেত
গড়ে তুলবো সেই বাংলাদেশ
গরবো সেই সোনালী বাংলা
শোধ করবো তোমাদের রক্তের ঋণ।
শেষ কথা
স্বাধীনতা বাংলাদেশের একটি জাতীয় দিবস। তাই ২৬শে মার্চ কবিতা আমাদের গৌরবের দিন। এই দিন টি আমরা সবাই ভালোভাবে উদযাপন করার চেষ্টা করবো। আমরা তাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাবো, যারা দশেকে স্বাধীন করেছেন। এই পোস্টে স্বাধীনতা দিবসের সকল কবিতা গুলো দেওয়া হয়েছে। আশা করছি এই পোস্ট টি আপনাদের ভালো লেগেছে এবং এই পোস্ট থেকে ২৬শে মার্চ কবিতা ও স্বাধীনতা দিবসের কবিতা আবৃতি সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এই রকম আরও পোস্ট পেতে 24resultbd.com এর সাথেই থাকবেন। নিচে এই সম্পর্কিত আরও কিছু পোস্ট দেওয়া আছে, সেগুলো দেখেনিতে পারেন।
আরও দেখুনঃ
২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা বার্তা, স্ট্যাটাস ও ছবি
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস স্ট্যাটাস ২০২৩
২৬ শে মার্চ নিয়ে উক্তি, স্ট্যাটাস, কবিতা ও ছন্দ